ব্লগার সৌরভের ইউটিউব চ্যানেল

বিশ্ব রেকর্ডের সামনে মুমিনুল

Mominul, Haque, Sourav


বিস্ময় সৃষ্টি থেকে আর এক ধাপ দূরে! পরে যে কোন টেস্ট ম্যাচেই খেলুন না কেন একটিমাত্র অর্ধশতক প্রয়োজন। তাহলেই টেস্ট ক্রিকেটে বিশ্বরেকর্ড গড়ে ফেলবেন মুমিনুল হক সৌরভ। দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটে যাত্রা শুরুর পর থেকেই সৌরভ ছড়িয়ে যাচ্ছে তাঁর ব্যাট। আর ব্যাটিং অর্ডারে তিন নম্বর স্থানটায় বাংলাদেশ দলে পাকাপোক্ত করে ফেলেছেন নিজের অবস্থান। অনেকটাই ধীরস্থির স্বভাবের বলে অবশ্য কিছুটা দোষ দিয়ে থাকেন অনেকে। কিন্তু সেভাবেই তিনি আজ অন্যরকম এক উচ্চতায় পৌঁছে গেছেন। ছাড়িয়ে গেছেন ভারতের শচীন টেন্ডুলকরকে আর কিংবদন্তি ক্রিকেটার ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডসকে ছুঁয়ে ফেলেছেন। এমনকি তাঁর পেছনে পড়ে গেছেন স্যার ডন ব্র্যাডম্যান, স্যার গ্যারি সোবার্স, স্যার ক্লাইড ওয়ালকট, জ্যাক ক্যালিস, আলভিন কালিচরণ, রাহুল দ্রাবিড়, এ্যালান বোর্ডার, মার্ক টেলর, কুমার সাঙ্গাকারা, জন এডরিচ, মাইক গ্যাটিং, ইয়ান চ্যাপেল, গ্রাহাম গুচ, ওয়ালি হ্যামন্ড ও এড উইকসদের মতো বিশ্বনন্দিত টেস্ট ক্রিকেটারদের। মাত্র ২৩ বছর বয়সেই কি করেছেন মুমিনুল? তাঁর বয়সে তালিকায় থাকারা সেটা করতে পারেননি। টানা ১১ টেস্টেই অর্ধশতাধিক রানের ইনিংস খেলে বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছেন যা ভিভ রিচার্ডসেরও আছে। টেস্ট ইতিহাসে সর্বাধিক সেঞ্চুরি ও রানের রেকর্ডধারী টেন্ডুলকরের আছে টানা ১০ টেস্টে। এখন অবিস্মরণীয় এক কীর্তি গড়ার সামনে দাঁড়িয়ে মুমিনুল। পরে যে টেস্টে খেলবেন যে কোন এক ইনিংসে শুধু একটি হাফসেঞ্চুরি করলেই হবে। টানা ১২ টেস্টে অর্ধশতাতিক রানের ইনিংস খেলে এককভাবে বিশ্ব রেকর্ডের মালিক দক্ষিণ আফ্রিকার এবি ডি ভিলিয়ার্স। আগামী মাসে ভারতের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে একমাত্র টেস্টেই ভিলিয়ার্সের বিশ্ব রেকর্ডে ভাগ বসানোর দারুণ সুযোগ মুমিনুলের।
‘লিটল মাস্টার’ ফিরে এসেছেন। এ উপাধিটি বিশ্ব ক্রিকেটে একজনের নামের সঙ্গেই জুড়ে গেছে। ২০১২ সালেই ওয়ানডে ক্রিকেটকে বিদায় জানানো ‘লিটল মাস্টার’ ভারতের ক্রিকেট ঈশ্বর খ্যাত শচীন টেন্ডুলকর টেস্ট ক্রিকেটেও বিদায়ের ঘোষণা দিয়ে ফেলেছিলেন। এ কারণে বাংলাদেশের তরুণ টপঅর্ডার মুমিনুল হক সৌরভকে নিয়ে ভারতীয়রাই গণমাধ্যমে ফলাও করে লিখেছিলেন বিশ্ব ক্রিকেটে নতুন লিটল মাস্টারের উদয় হয়েছে। ক্যারিয়ারের চতুর্থ টেস্টেই দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। সেটি ছিল টেস্ট ক্যারিয়ারে নিজের মাত্র ষষ্ঠ ইনিংস।
২০১৩ সালের অক্টোবরে চট্টগ্রামে সফরকারী নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে তাঁর উইলো থেকে বেরিয়ে আসে ১৮১ রান। তখন মাত্র ২১ বছর বয়সী মুমিনুল। এ কারণেই ক্যারিয়ারের শুরুতেই পেয়ে যান এমন সম্মান! বিশ্ব ক্রিকেটের নতুন এই ‘লিটল মাস্টার’ মিরপুর টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে হাফসেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ছাড়িয়ে গেছেন পুরনো লিটল মাস্টারকে। টানা ১১ টেস্টে পঞ্চাশোর্ধ্ব (হাফসেঞ্চুরি) ইনিংস খেলে এখন মুমিনুল ঠাঁই নিয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডসের পাশে। সঙ্গে আছেন আরও দুই ভারতীয় ক্রিকেটার বীরেন্দর শেবাগ ও গৌতম গাম্ভীর। তবে টানা ১২ টেস্টে অর্ধশতকের বেশি রান করে সবার ওপরে দক্ষিণ আফ্রিকার এবি ডি ভিলিয়ার্স। পরের টেস্টে অর্ধশতক পেলেই ভিলিয়ার্সের গড়া বিশ্ব রেকর্ডের অংশীদার হয়ে যাওয়ার সুযোগ এখন ২৩ বছর বয়সী মুমিনুলের। মিরপুর টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৬৮ রান করে তিনি দেশের মাটিতে ষষ্ঠ বাংলাদেশী হিসেবে পূর্ণ করেছেন এক হাজার রান।
শচীনের টেস্ট অভিষেক হয়েছিল ভিনদেশে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তিনি আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু করেন টেস্ট ম্যাচ দিয়ে। মুমিনুল ওয়ানডে দিয়ে শুরু করলেও টেস্ট ক্রিকেটে যাত্রা শুরু করেন শ্রীলঙ্কা সফরে। অভিষেক টেস্টেই ৫৫ রানের একটি অর্ধশতক দিয়ে শুরু হয়েছে তাঁর ক্যারিয়ার। যেটা শচীন পারেননি। ভিভ রিচার্ডসেরও টেস্ট ক্যারিয়ার দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যাত্রা শুরু হয় ভিনদেশ ভারতের মাটিতে। তিনিও পারেননি অভিষেকেই অর্ধশতক হাঁকাতে। পরের টেস্টেও অর্ধশতক হাঁকান মুমিনুল। ধারাবাহিকতার প্রতীক হয়ে ওঠেন নিয়মিত রানের মধ্যে থেকে। অবশেষে ২০১৩ সালের অক্টোবরে সফরকারী কিউইদের বিরুদ্ধে ক্যারিয়ারের চতুর্থ টেস্টে খেলতে নেমেই অবিস্মরণীয় এক কীর্তি গড়ে ফেলেন মুমিনুল। ১৮১ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলে দেশের মাটিতে কোন বাংলাদেশী ক্রিকেটারের মধ্যে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস খেলেন তিনি। সেটি অবশ্য এবার খুলনা টেস্টে ছাড়িয়ে গিয়ে তামিম ইকবাল খেলেছেন ২০৬ রানের ইনিংস। তবে ওই ইনিংসটির পরই মুমিনুল বহির্বিশ্বে নয়া ‘লিটল মাস্টার’ খেতাব পেয়ে যান।
এত বড় খেতাব যার নামের পাশে তাঁকে চিনতে ভুল করেননি দেশ-বিদেশের ক্রিকেটবোদ্ধারা। ধারাবাহিকভাবেই তাঁর ব্যাটে রান এসেছে। ১৪ টেস্টে তাঁর রান ১৩৮০। ব্যাটিং গড় ৬০! আছে চারটি সেঞ্চুরি ও ৯টি হাফসেঞ্চুরি। মিরপুরে দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ইনিংসটি খেলেছেন বিপদের মুহূর্তে একাই লড়ে সাবলীল ভঙ্গিতে ব্যাট চালিয়ে ১০২ বলে ৯ চারে তিনি ৬৮ রান করে ফিরে যান। এর আগেই দেশের মাটিতে পূর্ণ করেন ১ হাজার রান। মুমিনুলের আগে অবশ্য অনেক বেশি ম্যাচ খেলে হাবিবুল বাশার (২২ টেস্ট), মোহাম্মদ আশরাফুল (২৮ টেস্ট), তামিম ইকবাল (২৫ টেস্ট), মুশফিকুর রহীম (২৬ টেস্ট) ও সাকিব আল হাসান (২৭ টেস্ট) দেশের মাটিতে এই কীর্তি গড়েছেন। অথচ দেশের মাটিতে মাত্র ৯ টেস্টে মুমিনুলের রান ৭৫ গড়ে ১০৫০! ব্যাটিং গড়ে দেশের মাটিতে তিনিই সবার ওপরে।
এর চেয়েও বড় কীর্তিটা গড়েছেন তিনি বাংলাদেশের আরেকটি ইনিংস পরাজয়ের ম্যাচে। যার কারণে হারের মধ্যেও যোগ হয়েছে অসামান্য এক কীর্তি। এ নিয়ে টানা ১১ টেস্টেই অর্ধশতাধিক রানের ইনিংস উপহার দিলেন মুমিনুল। তিনি ছাড়িয়ে গেলেন লিটল মাস্টার শচীনের টানা ১০ টেস্টে পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস খেলার রেকর্ডটাকে। এবার তিনি ছুঁয়ে ফেলেছেন স্যার ভিভ রিচার্ডসকে। শুধু টানা ১২ টেস্টে এমন কীর্তি গড়ে বিশ্ব রেকর্ডের মালিক ভিলিয়ার্স এগিয়ে আছেন। আর মুমিনুলের কাতারে আছেন শেবাগ ও গাম্ভীরও। তবে কোন ব্যাটসম্যানই ক্যারিয়ার শুরুর দুই বছর হওয়ার আগেই এমনটা করতে পারেননি। বাকিরা করেছেন টেস্ট ক্রিকেটে দীর্ঘদিন বিচরণ করে যথেষ্ট অভিজ্ঞ হওয়ার পর। সেটা মুমিনুল মাত্র ক্যারিয়ারের চতুর্থ থেকে শুরু করে ১৪তম টেস্ট পর্যন্ত টানা ১১ টেস্টে করে দেখালেন। মুমিনুলের আগে বাংলাদেশের পক্ষে টানা অর্ধশতক পাওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে ছিলেন তামিম। তিনি ২০১০ সালে টানা ৭ টেস্টে খেলেছিলেন পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস। মুমিনুলের সামনে এবার হাতছানি ভিলিয়ার্সের বিশ্ব রেকর্ডের সঙ্গী হওয়ার। সেজন্য নিজের পরবর্তী টেস্টে একটি অর্ধশতক প্রয়োজন পড়বে শুধু মুমিনুলের।

সূত্রঃ Daily Janakantha

আমার সকল পোস্ট এর ফেসবুক আপডেট পেতে আমার ফেসবুক পেজে লাইক দিন,
আমার ফেসবুক পেজঃ ব্লগার সৌরভ ডট কম
পরবর্তী পোষ্ট
« Prev Post
পূর্ববর্তী পোষ্ট
Next Post »

Thanks for your comment